বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন

মানুষ মরবে বলে পিছু হটলেন ট্রাম্প

মানুষ মরবে বলে পিছু হটলেন ট্রাম্প

স্বদেশ ডেস্ক: ইরানের ওপর তিনটি পৃথক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার হুকুম দিয়েও শেষ মুহূর্তে তা থামিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে গতকাল বিষয়টি জানান। তার দাবি, বৃহস্পতিবার রাতের পরিকল্পিত ওই হামলায় দেড়শ মানুষের প্রাণহানি হতো বলেই মাত্র ১০ মিনিট আগে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। হরমুজ প্রণালির আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের মনুষ্যবিহীন যান ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করে ইরান। এরই পাল্টা জবাব হিসেবে শত্রুদেশটির ওপর হামলার হুকুম দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সম্প্রতি পারস্য উপসাগরে তেলবাহী দুটো জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে।

ওয়াশিংটনের দাবি, তেহরান ওই হামলা চালিয়েছে। কিন্তু তেহরান উল্টো মার্কিন শক্তিকেই দুষছে। হরমুজ প্রণালিতে দুই মাসে দুবার তেলের জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক অবরোধের চাপে পিষ্ট হয়ে শেষমেশ কৌশলগত ধৈর্য হারাতে বসেছে ইরান। নিজেদের তেলবাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় তারা অন্যদের তেল ব্যবসায় বাধা দিতে চাচ্ছে। আর সে কারণেই সম্ভবত ওমান উপসাগরে ১৩ জুন দ্বিতীয় হামলাটি তারা করেছে। এ রকম চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মার্কিন ড্রোন ধ্বংস করে ইরান।

দেশটির সবচেয়ে অভিজাত সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, ড্রোনটি ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল। কিন্তু ড্রোনটি যে আন্তর্জাতিক আকাশ সীমাতেই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। টুইটারে যা বললেন ট্রাম্প ট্রাম্প লিখেছেন, “সোমবার তারা মনুষ্যবিহীন একটা ড্রোন গুলি করে নামিয়ে ফেলে। ওটা আন্তর্জাতিক জলসীমার ওপর উড়ছিল। এর জবাবে আমরা তিনটা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে চেয়েছিলাম। আমরা পুরোই প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আমি জানতে চাইলাম, কতজন মারা যেতে পারে। ‘১৫০ জন, স্যার’-এই ছিল একজন জেনারেলের উত্তর। হামলার ঠিক ১০ মিনিট পূর্বে আমি তা স্থগিত করি।’

ট্রাম্প যুক্তি দেখান, ‘একটা মনুষ্যবিহীন ড্রোনের বদলে [এতগুলো মানুষ হত্যা] সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।’ তিনি লেখেন, ‘আমার কোনো তাড়া নেই। আমাদের সেনাবাহিনী নবউদ্যমে গড়ে ওঠা এক বাহিনী। নতুন। সামনে বাড়তে সদাপ্রস্তুত। বিশ্বের মধ্যে সেরা।’ ট্রাম্প মনে করেন, ‘অবরোধ হচ্ছে একেকটা ছোবল। আরও অবরোধ যোগ হয়েছে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশ্বাস, ‘ইরান কোনোদিনই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। কোনোদিনই যুক্তরাষ্ট্রকে সেই অস্ত্র দিয়ে আঘাত হানতে পারবে না। কোনোদিনই বিশ্বকে আঘাত করতে পারবে না।’ বিতর্কিত পারমাণবিক চুক্তি ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে পরমাণু নিয়ন্ত্রণবিষয়ক একটি চুক্তি সই করে ইরান। বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর ইউরোপীয় মিত্রদের বাধা সত্ত্বেও ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ইরানের ওপর তেল রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক অবরোধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানে আক্রমণ চালানো হলে এটা হতো মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের তৃতীয় হামলা।

এর আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলার নির্দেশ দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। পুতিনের সতর্কবার্তা এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন হুশিয়ার করেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক হামলা করে তা হলে সেটা ‘মারাত্মক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে। বৃহস্পতিবার রাতে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

পুতিন বলেন, যদি এমন হামলা হয় তা হলে এর ফলে ব্যাপকভাবে যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে তার পরিণতি কল্পনা করাও সম্ভব নয়। সংঘাত একবার ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণে আনাও খুব কঠিন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আক্রান্ত হলে সমুচিত জবাব ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, মার্কিন চাপ ও অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের মুখে ইরান তার আঞ্চলিক নীতি পরিবর্তন করবে না।

প্রেস টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তারা যুদ্ধ চান না, তবে আক্রান্ত হলে তার সমুচিত জবাব দেবেন। আর জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মাজিদ তাখত রাভানচি বলেছেন, মার্কিন ড্রোনটি স্পষ্টতই গুপ্তচরবৃত্তির কাজে যুক্ত ছিল। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। জাতিসংঘ মহাসচিব ও নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা এক চিঠিতে মাজিদ তাখত রাভানচি বলেছেন, ইরান যুদ্ধ চায় না। কিন্তু তারা শত্রুপক্ষের তৎপরতার বিরুদ্ধে নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষার অধিকার রাখে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877